• Latest News

    জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩-২০১৪ইং


    ঢাকা: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামীলীগ নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনের ৫ মাসের মধ্যে নবগঠিত সরকারকে সংসদ ভেঙ্গে আবার নির্বাচন করতে হয়েছিল। আর সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে। এবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জিতে গেল আওয়ামীলীগ।

    ইসির কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, এবার ভোট কাস্টের হার ৪৫ শতাংশের বেশি হবে না। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ২৬ শতাংশের কিছু বেশি। এছাড়া এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনেও বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। সেই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৪ শতাংশের কিছু বেশি।
    ইসির  জনসংযোগ শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১ম জাতীয় সংসদ (১৯৭৩-৭৫) নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। এতে মোট ১৪ টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। মোট প্রার্থী ছিলো ১ হাজার ৯১ জন এবং ভোটার ছিলো ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন। আর ব্যালটে ভোট পড়েছিলো ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৮০৮টি। শতকরা হিসাবে যা মোট ভোটের ৫৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ঐতিহাসিক এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯২টি আসনে জয়লাভ করেছিল । এতে ১১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন।
    এরপর ২য় সংসদ (১৯৭৯-৮২) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এতে ২৯টি দল অংশ নেয়। মোট ২ হাজার ১২৫ জন প্রার্থী ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। মোট ভোটার ছিলো ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৮ জন। এর বিপরীতে ভোট পড়েছিলো ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২৪টি। যার শতকরা হার ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এতে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২২০টি আসনে জয়লাভ করে। আর আওয়ামী লীগ পায় ৩৯ টি আসন।
    ৩য় সংসদ (১৯৮৬-৮৭) নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। এতে ২৮টি দলের মোট ১ হাজার ৫২৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সে সময় ভোটার ছিলো ৪ কেটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৮ জন। ভোট পড়েছিলো ২ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ৮৮৯টি। প্রদত্ত ভোটের হিসাবে মোট ভোটার সংখ্যার ৫৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জাতীয় পার্টি এতে ১৮৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পায় ৭৬টি আসন।
    ৪র্থ জাতীয় সংসদ (১৯৮৮-৯০) নির্বাচন হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিলো ৯৭৭ জন। ভোটার ছিলো ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৯ জন এবং ভোট পড়েছিলো ২ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৪০ টি। শতকরা হিসাবে যা মোট ভোটের ৫৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১ টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। সম্মিলিত বিরোধীদল পায় ১৯ টি আসন।
    ৫ম জাতীয় সংসদ (১৯৯১-১৯৯৬) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। মোট ৭৫ টি দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ৭৮৭ জন। ভোটার সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ২০ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৩ জন। ভোট দিয়েছিলেন ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৩ জন অর্থাৎ ৫৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০ টি এবং  সংরতি আসনের ২৮ টি তে নির্বাচিত হয়ে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে পায় ৮৮ টি আসন।
    ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মোট ৪২ টি দল। প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৪৫০জন। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার ৪১২ জন। প্রদত্ত ভোট সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮১ টি। শতকরা ভোটের হার ছিল ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামীলীগ এ নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিএনপি এতে ২৭৮ টি, ফ্রিডম পার্টি ১টি আসন পায়। স্বতন্ত্র থেকে ১০ জন নির্বাচিত হন। এছাড়া ১০ জন নির্বাচন বর্জন করে, আর একটি আসনের নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত হয়ে যায়।
    ৭ম জাতীয় সংসদ (১৯৯৬-২০০১) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১১ জুন। এ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ৫৭২ জন ও ভোটার ছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার ৪২২ টি।  নির্বাচনে প্রদত্ত ভোট ৪ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৫৬৪ জন। যার শতকরা হিসেবে ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২ টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৩টি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি, জাসদ (রব) একটি আসন পায়। এছাড়া এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে একজন নির্বাচিত হন।
    ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০১-২০০৬) অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। ৫৫ টি দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৯৩৯ জন। ভোটার সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৮ জন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ৫ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৭ জন ভোটার। যা মোট ভোটের শতকরা হার ৭৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ টি, আওয়ামী লীগ ৬২টি, জামায়াত ১৭ টি, ইসলামী ঐক্যজোট ১৪টি, জাতীয় পার্টি একটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একটি আসন পায়। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে ৬ প্রার্থী নির্বাচিত হন।
    নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০৮-২০১৩) অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এতে মোট ৩৮ টি দল অংশগ্রহণ করে। সে সময় ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৭ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৫ জন ভোটার। যা মোট ভোটারের শতকরা ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে মোট ২৩১ টি আসনে নির্বাচিত হয়ে জয়ী হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পায় ৩০ টি আসন, জাতীয় পার্টি ২৭ টি, জাসদ ৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি , জামায়াতে ইসলামী ২টি, বিজেপি একটি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি একটি আসন পায়। আর স্বতন্ত্র থেকে ৪ জন প্রার্থী নির্বাচিত হন।
    সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য তৈরি করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজর ৯৭৭। কিন্তু ১৫৩ আসনে ভোটগ্রহণ না হওয়ায় প্রায় ৫ কোটি ভোটার কমে যায়। সবশেষে ১৪৭ আসনে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ জন ভোটার হিসেবে নিয়ে রবিবার সম্পন্ন হলো দশম সংসদের ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের ১২৭ জন, জাতীয় পার্টির ২০ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৩ জন ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পাটির ২জন।
    নির্বাচনে মোট ১২ টি দল অংশ নেয়। ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২০ জন, স্বতন্ত্র ১০৪ জন, জাতীয় পার্টির ৬৬ জন, জেপির ২৭ জন, বিএনএফের ২২ জন, জাসদের ২১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন, ন্যাপের ৬ জন, তরীকত ফেডারেশনের ৩ জন, খেলাফত মজলিসের ২ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ১ জন, গণফ্রন্টের ১ জন এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১ জন মোট ৩৯০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments
    Item Reviewed: জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩-২০১৪ইং Rating: 5 Reviewed By: JKL
    Scroll to Top